(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)

ঢাকা-১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ২০২৪ :
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, জাতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একটা বিশাল পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে। আমাদের জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তনের নমুনা দেখা যাচ্ছে। সেখানে আমরা রাজনীতি কি করছি, অতীতে কি করেছি এবং ভবিষ্যতে কি করবো তার একটা ধারণা থাকা দরকার।

আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি বনানী কার্যালয়ে জাতীয় কৃষক পার্টির সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

এসময় তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতিপক্ষ ৯০ এর পর থেকে আমাদেরকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমাদের উপর নির্যাতন ও বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সব সময় জনগণের সঙ্গে ছিলাম, কখনো কারো দোষর ছিলাম না। আমরা সবসময় জনগণের জন্য কাজ করেছি। আমরা জনগণের জন্য কথা বলেছি, জনগণের জন্য কাজ করেছি। যার জন্য দীর্ঘ ৩৭ বছর পরেও জাতীয় পার্টি জনগণের মাঝে টিকে আছে। আমরা যেকোন সময় যেকোন নির্বাচনে গেলে ভালো ফল করবো।
তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদ সাহেব ক্ষমতা নিয়েছিলেন জনগণের আগ্রহে। জনগণ তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। ৯০ সালে জনগণের দাবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী নিরপেক্ষ তৈরী করার জন্য এরশাদ সাহেব পদত্যাগ করেছিলেন। তিন জোটের সমন্বয়ে নির্বাচনের যে রূপরেখা তৈরী হয়েছিল জাতীয় পার্টিকে সেই সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি। এরশাদ সাহেবকে জেলে বন্দি রেখে তাকে নির্বাচনের বাইরে রেখে নির্বাচন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের মুখে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। পরবর্তীতে এরশাদ সাহেব নির্বাচন করেছিলেন এবং পাঁচ-পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি সারাদেশে প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও ৩৬টি আসনে জয়লাভ করেছিল। তখনো জনগণের মনে জাতীয় পার্টির স্থান ছিল।

তিনি বলেন, পার্লামেন্টে আসার পরে আমাদের সংসদ সদস্যদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এরশাদ কে স্বৈরাচার বলা হয়েছে। এটা চরম অগণতান্ত্রিক মনোভাব। এরশাদ সাহেব কে যারা স্বৈরাচার বলেন তারা অগণতান্ত্রিক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ। জনগণের শাসন মানে জনগণের ইচ্ছায় শাসন। জনগণের ইচ্ছার প্রতি যার শ্রদ্ধা আছে তিনি গণতন্ত্রমনা। এরশাদ সাহেব একজন ভালো রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, জনগণের ইচ্ছা তিনি রাজনীতিতে থাকবেন। তাই তাকে ভোট দিয়েছে। জনগণ আশা করেছিল, উনি স্বাভাবিক রাজনীতি করবেন। তাঁর রাজনীতিকে যারা বাঁধা দিয়েছেন তারা গণতন্ত্রমণা নয়। তাই এরশাদকে স্বৈরাচার বলা অগণতান্ত্রিক।

তিনি আরো বলেন, ৯৬ এর নির্বাচনে নির্বাচনে কেয়ারটেকার প্রথা বাতিল করার চেষ্টা জনগণ মেনে নেয়নি। আমরা তখন জনগণের পক্ষে আন্দোলনে ছিলাম। আমাদের সাথে আওয়ামী লীগ ছিল, জামায়াতও ছিল। পরবর্তীতে যখন নির্বাচন হলো আমরা সবাই আলাদাভাবে নির্বাচন করেছি। সরকার গঠনের সময় যেহেতু জনগণ বিএনপি’র পক্ষে ছিল না- তাই আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় আমাদেরকে মাঠে নামতে দেয় নাই, আমাদের পার্টি অফিস ভেঙে দিয়েছে, আক্রমণ করে আমাদের সভা পন্ড করে দিয়েছে, আমাদের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারী করেছে। তারপরেও আমরা ৯৬ তে ভালো করেছি। এরশাদ সাহেব জেলে থেকে ৫টি আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। সুতরাং এরশাদ সাহেব কখনো জনগণের কাছে নিন্দিত ছিলেন না, জনগণের হৃদয়ে তার শক্ত অবস্থান ছিল। প্রতিটা নির্বাচনে এরশাদ সাহেব যেখানে দাঁড়িয়েছেন সেখানেই জয়লাভ করেছেন। সুতরাং এরশাদকে স্বৈরাচার অথবা পতিত স্বৈরাচার যারা বলেন, তারা হয় স্বৈরাচারের অর্থ বোঝেন না অথবা গণতন্ত্রকে সম্মান করেন না। জনগণের ইচ্ছায় যে নেতা তৈরী হয় অথবা যে নেতার কর্মকান্ডে জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হয় তিনি কখনো স্বৈরাচার হতে পারেন না।

জাতীয় কৃষক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন চাকলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় তিনি আরো বলেন, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের দলকে বিভক্ত করে। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দূর্ণীতিতে চ্যাম্পিয়ন হলে জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছিল। তখন আমরা চারদলীয় জোট করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ একটি মামলা দিয়ে এরশাদ সাহেব কে জেলে আটকে রেখে ব্ল্যাকমেইল করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দূর্নীতিতে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা র‌্যাব তৈরী করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড শুরু করে। যা আওয়ামী লীগের শেষদিন পর্যন্ত চলমান ছিল। বিএনপি’র আমল থেকেই দলীয় প্রশাসন নিজস্ব ব্যবসায়িক বলয় তৈরী করা শুরু হয়েছিল। ২০০৬ এর নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নিজস্ব লোক বসিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন কুক্ষিগত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে জনগণের যে আন্দোলন আমরা তাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলাম। বিএনপি’র অপশাসন থেকে মুক্তি পেতে আমরা মহাজোট গঠন করেছিলাম। ২০০৮ এ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল এবং মহাজোট বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু জনগণ আশাহত হয়। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের সাথে নতুন করে গুম, খুন যুক্ত হয়। জাতিকে আওয়ামী লীগ ও জনগণ এই দুইভাগে বিভক্ত করা হয়। ২০১৪ সালে সংবিধান সংশোধন করা হয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঐ সংবিধানের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। তখন ওনাকে চিকিৎসার নামে আটক করা হয়। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সারাদেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। কয়েকজন ভয়ভীতির কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারেন নাই। পরবর্তীতে তাদেরকে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। তখন আমরা জনগণের আকাঙ্খা উপলব্ধি করে নির্বাচন বর্জন করতে চেয়েছিলাম।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ২০১৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবাই অংশগ্রহণ করেছে। আদর্শগত কারণে অস্তিÍত্ব সংকটের আশংকায় বিএনপি’র বদলে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিলাম। আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা থাকার পরেও আমরা তাদের অন্যায়-জুলুমের প্রতিবাদ করেছি। দেশের জনগণকে সুবিধাভোগী ও নির্যাতিত এই দুইভাগে ভাগ করার যে অপরাজনীতি তৈরী করা হচ্ছিল আমরাই প্রথম তা তুলে ধরে বিরোধীতা করেছিলাম। ১৮ থেকে ২৪ পর্যন্ত সকল দূর্ণীতির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম। যার ফলশ্রুতিতে আমাকে অন্যায়ভাবে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা তখনো জনগণের পক্ষে ছিলাম। ২০২৪ এ বিভিন্ন টালবাহানা করে আমাদের নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমাদের সাথে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেও নির্বাচনে তা রক্ষা করা হয়নি। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন হতো না বা নির্বাচন বৈধতা পেতনা এই রকম পরিস্থিতি ছিল না।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি, লাগামহীন স্বজন প্রীতি, দূর্নীতি-দুঃশাসনের জন্য। ছাত্রদের এই আন্দোলনেও আমরা প্রথম দিন থেকেই ছাত্রদের সাথে ছিলাম। সংসদেও আমরা বলেছি, কোটা প্রথা সংবিধান সম্মত নয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন জনসভায় আমরা কোটা প্রথার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছি। বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোটা আন্দোলন দমন করার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার ছিলাম। জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে কোটা আন্দোলনকে সমর্থন করে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। আমিই প্রথম ছাত্রদের বীর মুক্তিসেনা হিসেবে অবিহিত করেছি। আন্দোলনে আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা দেওয়ার দাবী জানিয়েছি। আবু সাঈদের মায়ের সাথে দেখা করেছি ও রংপুরের জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছি। রংপুর আমাদের দলের কর্মী নিহত হয়েছে, জেল খেটেছে। আমাদের রংপুরের মেয়রকে হয়রানী করার চেষ্টা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগের সাথে মামলার আসামী করা হচ্ছে। এটা মোটেই কাম্য নয়। আমরা জনগণের সাথেই ছিলাম। জনগণ পরিবর্তন আশা করে বুকের রক্ত দিয়ে আওয়ামী সরকারকে উৎখাত করেছে। কতিপয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পথেই হাঁটছে। যা পরিবর্তনের জন্য মোটেই সুখকর নয়। জনগণ এটাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না। আগে অনেকেই অনেক কথা বলেননি, এখন কথা বলার পরিবেশ তৈরী হয়েছে। এখন দেশে থেকে, দেশের বাইরে থেকে অনেকেই অনেক কথা বলছেন, বা বলার চেষ্টা করছেন। আমরা কিন্তু বরাবরই দেশে থেকে, জনগণের পাশে থেকে জনগণের কথা বলেছি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টি মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব এ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মনিরুল ইসলাম মিলন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, মোঃ মোস্তফা মহসিন, ভাইস চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর হোসেন, সুলতান আহমেদ সেলিম, মোঃ শফিউল্ল্যাহ শফি, শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এমএ রাজ্জাক, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, এমএ সুবহান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় সদস্য সামছুল হুদা মিয়া, মোঃ জামাল উদ্দিন, হুমায়ুন কবীর শাওন, কৃষক পার্টির আব্দুস কুদ্দুস মানিক, মোস্তফা কামাল, এনামুল হক বেলাল, আওয়াল হোসেন, রমজান আলী ভূঁইয়া, আব্দুল হামিদ সরকার, এ্যাড. এমদাদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

আজ সকালে ড. ইরফান বীন তুরাব আলীর সভাপতিত্বে ও মুফতি ফিরোজ শাহের পরিচালনায় জাতীয় ওলামা পার্টির এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বার্তা প্রেরক-

সমরেশ মন্ডল মানিক
যুগ্ম দফতর সম্পাদক, জাতীয় পার্টি