জিএম কাদেরজাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, দলীয়করণের ফলে দেশে সুশাসন নেই। সরকারি দল না করলে, পরীক্ষায় প্রথম হয়েও চাকরি পাওয়া যায় না। সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও টেন্ডারে কাজ পাচ্ছেন না ঠিকাদাররা।আবার টেন্ডার ছাড়া কাজ দেওয়ার বিধান করেছে, যা সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থি। তিনি বলেন, সরকারি দলের নেতাকর্মীরা অপরাধ করেও খালাস পেয়ে যায়, সবার জন্য আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। শনিবার রাজধানীর বারিধারার কুড়িলের একটি মিলনায়তনে জাতীয় যুব সংহতির প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।সাবেক প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির সভানেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।সভাপতিত্ব করেন জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক ও জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এইচএম শাহরিয়ার আসিফ। জাতীয় যুব সংহতির সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন সভা পরিচালনা করেন।প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জিএম কাদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকটি দেশ সফর করে করোনার টিকা না পেয়ে দেশে ফিরে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমের সামনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ধনী দেশগুলো নাকি বাংলাদেশকে টিকা দিতে রাজি হচ্ছে না।যদি তাই হয় তা হলে বিশ্বে বাংলাদেশ বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন-বিশ্বে নাকি বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ ১৯৯৬ সালে পাসপোর্টভিত্তিক জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৬তম।একই জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নগামী হতে হতে বর্তমানে ১০৬তমে এসে দাঁড়িয়েছে। জিএম কাদের বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের মর্যাদা বাড়তে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের মর্যাদা মোটেই বাড়েনি, বরং কমেছে।তাই এখন বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে কেউ দেশের বাইরে গেলে তাকে নানারকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে দেশে তুলনামূলকভাবে বেশি সুশাসন ছিল। জাতীয় পার্টির শাসনামলে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে ছিল না।তাই দেশের মানুষ মনেপ্রাণে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসাবে প্রত্যাশা করছে। দেশের মানুষ আবারও জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়।তিনি এসময় দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।জিএম কাদের বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব জেলা কাউন্সিল সম্পন্ন করতে হবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮টি বিভাগীয় শহরে কর্মী সমাবেশ করা হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিভাগীয় শহরে জনসভা করা হবে।তখন জাতীয় পার্টি রাজনীতির রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পাটি। নির্বাচনের মাধ্যমে গণমানুষের কাছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উন্নয়ন ও সুশাসনের চিত্র তুলে ধরা হবে।নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বাত্মকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধাচারণ করবে তাদের পার্টির শত্রু হিসাবে বিবেচনা করা হবে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির সভানেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আর রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায় না।তারা জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়। সবাই এখন জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে-এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী এ সময় তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা আর কারও ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হব না।জাতীয় পার্টি যাতে আগামীতে এককভাবেই রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে পারে সেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আজ আমাদের মাঝে নেই। তার কর্ম এবং আদর্শ আর তার দেখানো পথ আমাদের শক্তি।জিএম কাদেরের নেতৃত্বে এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেখানো পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাব। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করব। সভার শুরুতেই জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং করোনায় আক্রান্ত দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর রোগমুক্তি কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চান জিএম কাদের।